অতীতে পাবলিক পরীক্ষায় নকলের মহোত্সব থাকিলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের খুব একটা নজির নাই। এখন ডিজিটালাইজেশনের যুগে এবং শিক্ষকদের চাকুরি রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের চাকুরি প্রাপ্তির দৌড়ের কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও অসহায়ত্ব বোধ করিতেছে। বিজি প্রেস হইতে শুরু করিয়া প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী এবং ইহার সহিত জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর কড়া নজরদারি রাখায় একদিন বা দুইদিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হইবার প্রবণতা বন্ধ হইয়াছে। এমনকি পরীক্ষার দিন যাহাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়, এইজন্য পরীক্ষার্থীদের আধাঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হইয়াছে। কিন্তু তাহার পরও চলমান এসএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে আংশিক (শুধু নৈর্ব্যক্তিক অংশ) প্রশ্নপত্র ফাঁস হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ উঠিয়াছে। এখন এই ব্যাপারে গঠিত ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি উক্ত পরীক্ষা বহাল বা বাতিলের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে বলিয়া আশা করা যায়।
ধারণা করা হইতেছে যে, পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্র হইতে বা উপজেলা হইতে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নেওয়ার দায়িত্বে থাকা কোনো অসাধু শিক্ষক বা ব্যক্তি প্রশ্নপত্রের সিলগালা প্যাকেট খুলিয়া মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি তুলিয়া তাহা বাহিরে পাঠাইয়াছে। সেখান হইতে সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে তাহা বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। এবার প্রশ্নপত্র পাইতে বিস্ময়করভাবে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে দেওয়া হইয়াছে বিজ্ঞাপন। কোথাও কোথাও বলা হইয়াছে, প্রশ্ন পাইতে হইলে এই গ্রুপটিতে লাইক দিন। যাহারা লাইক দিয়াছে, তাহাদেরকে ম্যাসেঞ্জারে প্রশ্ন ও উত্তর পাঠানো হইয়াছে। বোঝা যাইতেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা সংঘবদ্ধ ও ধুরন্ধর। তাহারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলিতে নিত্যনূতন অপকৌশল অবলম্বন করিতেছে। তাহাদের মোকাবিলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ততোধিক কৌশলী হইতে হইবে।
পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা গোটা জাতির জন্যই উদ্বেগজনক। দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার যে সাফল্য, তাহা এই কেলেঙ্কারিতে ঢাকা পড়িয়া গিয়াছে। প্রশ্ন উঠিয়াছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কুত্সা রটনা করিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং দোষী ব্যক্তিকে খুঁজিয়া বাহির করিতে তেমন বেগ পাইতে হয় না। কিন্তু মোবাইল নম্বরসহ বিজ্ঞাপন দিয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হইলেও দোষীদের এবং ইহার মূল হোতাদের কেন আটক করা যাইতেছে না? গত বত্সর যাহাদের ধরা হইয়াছিল, তাহারা ছাড়া পাইল কিভাবে? তাহা হইলে কি ভুল ব্যক্তিদের ধরা হইয়াছিল? প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরাইয়া দিতে পারিলে শুধু ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়াই যথেষ্ট নহে। প্রয়োজনে আরো কঠোর হইতে হইবে। এই সম্পর্কিত পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) ও আইসিটি আইনের যথাযথ প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। এই ধরনের অপরাধ বন্ধে দরকার মোবাইল নম্বরের যথাযথ রেজিস্ট্রেশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ। এই ব্যাপারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সতর্ক করিবার প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply